যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহানের বক্তব্যের পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লির রাজনীতি। ব্লুমবার্গ ও রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকার আসার পর দেশটির বিরোধী নেতারা নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে ‘জাতিকে বিভ্রান্ত করার’ অভিযোগ তুলেছে। সেই সঙ্গে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিশেষ অধিবেশনের দাবি জোরালো হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, কৌশলগত ভুলের কারণে পাকিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের প্রথম দিনেই ভারত যুদ্ধবিমান হারিয়েছে।
সিঙ্গাপুরে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিমানটি ভূপাতিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কেন ভূপাতিত করা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। কী ভুল হয়েছিল- সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভালো দিক হলো আমরা যে কৌশলগত ভুলটি করেছি তা বুঝতে পেরেছি, তা সংশোধন করতে পেরেছি এবং দুই দিন পর আবার তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, দীর্ঘ পরিসরে লক্ষ্যবস্তু করে আবার আমাদের বিমান উড়িয়েছি।’
এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্স-পোস্টে বলেছেন, ‘মোদি সরকার জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। যুদ্ধের কুয়াশা এখন কেটে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কংগ্রেস পার্টি কার্গিল পর্যালোচনা কমিটির আদলে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে আমাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা দাবি করছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ভূমিকা রেখেছেন বা মধ্যস্ততা করেছেন- এমন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে মল্লিকার্জুন খাড়গে আরও বলেন, ‘এটি সিমলা চুক্তির সরাসরি অবমাননা। ট্রাম্পের বারবার দাবি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে মার্কিন বাণিজ্য সচিবের দাখিল করা হলফনামা স্পষ্ট করার পরিবর্তে, মোদি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বের জন্য (মোদি) ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নিচ্ছেন, তাদের সাহসিকতার আড়ালে লুকিয়ে আছেন এবং সম্মত যুদ্ধবিরতির রূপরেখা এড়িয়ে যাচ্ছেন, যা (যুদ্ধবিরতি) ট্রাম্পের টুইটের পর ১০ মে (নয়াদিল্লির) পররাষ্ট্র সচিব ঘোষণা করেছিলেন।’
পৃথক এক্স-পোস্টে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি সর্বদলীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন না এবং সংসদকে আস্থায় নেবেন না। কিন্তু সিঙ্গাপুরে প্রতিরক্ষা প্রধানের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জাতি অপারেশন সিন্দুরের প্রথম পর্যায়ের কথা জানতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কি আগে বিরোধী নেতাদের আস্থায় নিতে পারতেন না?
তেলেঙ্গানার মন্ত্রী এবং কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা উত্তর কুমার রেড্ডি বলেন, পাকিস্তান কতগুলো ভারতীয় বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, তা সরকারের প্রকাশ করা উচিত। যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে, এই বিষয়টি সরকারকে অস্বীকার করা বন্ধ করতে হবে। প্রতিরক্ষা প্রধান নিজেই এটি উল্লেখ করেছেন। এর আগে, এয়ার মার্শাল ভারতী তার ব্রিফিং রিপোর্টে পরোক্ষভাবে এটি উল্লেখ করেছিলেন…। আজ পুরো দেশকে জানতে হবে, ভারত সরকার কোন কারণে যা কিছু ঘটেছে, তার সাথে আগে থেকে যোগাযোগ করেনি।
রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের উপনেতা সাগরিকা ঘোষও বিজেপির বিরুদ্ধে নাগরিকদের সামনে তথ্য উপস্থাপন না করার অভিযোগ তুলে ধরেন এবং সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সাগরিকা ঘোষ বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কেন প্রথমে এই খবর প্রকাশ করবে? কেন এই তথ্যগুলো প্রথমে ভারতের নাগরিকদের, সংসদকে এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানানো হয়নি?
আরেকটি পোস্টে তিনি বলেন, অপারেশন সিন্দুর সম্পর্কে এখন অনেক নাগরিকের উদ্বেগ রয়েছে, যা জাতীয় স্বার্থে উত্থাপন করা উচিত। এভাবেই একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র নিজেকে পুনর্নবীকরণ করে এবং অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়। নাগরিক এবং বিরোধীদের আস্থায় নিতে হবে। মোদি সরকার আর বিরোধীদের দাবি অস্বীকার করতে পারবে না। জুন মাসে সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকা উচিত।
খুলনা গেজেট/এএজে